ঢাকা , বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ , ২৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
মেধাস্বত্ব সংরক্ষণে সেল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ ইউজিসির বিপুল আমদানিতেও ভোজ্যতেলের বাজার অস্থিতিশীল চিন্ময় দাসের জামিন প্রশ্নে হাইকোর্টের রুল মুক্তিযোদ্ধা তথ্যভাণ্ডার তৈরিতে অনিয়ম এ সরকারও কুমিল্লা থেকে খুনের ইতিহাস শুরু করেছে-শামসুজ্জামান দুদু যুব সমাজ দেশে জীবন ও জীবিকার নিশ্চয়তা পাচ্ছে না-জিএম কাদের ট্রাম্পের শুল্কনীতির অস্থিরতায় বিশ্ব অর্থনীতির ঝুঁকি বাড়ছে সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন বাড়ছে পাচার অর্থ ফেরাতে কানাডার সহযোগিতা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা ২৩৯৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ক্রয় কমিটিতে ১২ প্রস্তাব অনুমোদন প্রশাসন ক্যাডারের তরুণদের হতাশা-ক্ষোভ গুচ্ছে থাকছে ২০ বিশ্ববিদ্যালয় ৯ বছরেও ফেরেনি রিজার্ভ চুরির অর্থ কারাগার থেকে ফেসবুক চালানো সম্ভব নয় ৮ ফেব্রুয়ারি ছয় সংস্কার কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ-আসিফ নজরুল এক সপ্তাহ পর ক্লাসে ফিরলেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা কোটায় উত্তাল জাবি সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনব্যবস্থা সমর্থন করছি না-মান্না চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের ৪৬ নেতাকর্মী গ্রেফতার বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় ধাপের আখেরি মোনাজাত আজ

ফের উত্তপ্ত পাহাড়

  • আপলোড সময় : ০৩-১০-২০২৪ ১২:৪৫:০২ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৩-১০-২০২৪ ১২:৪৫:০২ পূর্বাহ্ন
ফের উত্তপ্ত  পাহাড়
শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ১৪৪ ধারা জারি
* খাগড়াছড়িতে আগুন, ভাঙচুর ও সংঘর্ষে ১৫-২০ জন আহত
* পাহাড়ি ও বাঙালি সম্প্রদায়ের মাঝে চরম উত্তেজনা
* পাহাড়ে পরিস্থিতি থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে

খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুলের এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ তুলে একই প্রতিষ্ঠানের ইন্সট্রাক্টর (বিল্ডিং মেইনটেন্যান্স) ও বিভাগীয় প্রধান শিক্ষক আবুল হাসনাত মুহাম্মদ সোহেল রানাকে (৪৮) পিটিয়ে হত্যা করে। শিক্ষক নিহতের জেরে পাহাড়ি ও বাঙালি দুই পক্ষের মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এসময় দফায় দফায় সংঘর্ষে ১৫-২০ আহত হয়েছেন। সংঘর্ষে গতকাল মঙ্গলবার ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে খাগড়াছড়ি। নিরাপত্তা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার দাবি করলেও শহরজুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে খাগড়াছড়ি জেলা সদরে অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান দৈনিক জনতাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুলের এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ তুলে একই প্রতিষ্ঠানের ইন্সট্রাক্টর (বিল্ডিং মেইনটেন্যান্স) ও বিভাগীয় প্রধান শিক্ষক আবুল হাসনাত মুহাম্মদ সোহেল রানাকে (৪৮) পিটিয়ে হত্যা করে। শিক্ষক নিহতের জেরে পাহাড়ি ও বাঙালি দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এসময় ভাঙচুর হয়েছে টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিভিন্ন কক্ষ ও আসবাবপত্র। দুর্বৃত্তরা এসময় মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙচুর করে। এসময় আহত হয়েছেন ১৫-২০ জন। পুরো শহরজুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিক্ষক আবুল হাসনাত মুহাম্মদ সোহেল রানার বিরুদ্ধ এক শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে মামলা হয়েছিল। মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পর তিনি আবার চাকরিতে ফিরে এলে পাহাড়ি শিক্ষার্থীরা তাকে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টায় একই প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে অধ্যক্ষের রুমে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখেন পাহাড়ি শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে গণপিটুনি দেওয়া হলে তার মৃত্যু হয়। নিহত শিক্ষকের মরদেহ উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ১৫-২০ জন পাহাড়ি কিশোর-যুবক ওই শিক্ষককে এলোপাতাড়ি মারছেন। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
খাগড়াছড়ি জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. রিপল বাপ্পি চাকমা বলেন, হাসপাতালে নেয়ার আগেই শিক্ষক আবুল হাসনাত মুহাম্মদ সোহেল রানা মারা গেছেন। ময়নাতদন্ত শেষে বিস্তারিত জানা যাবে।
উক্ত ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৩টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান। তিনি জানান, অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সদরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। সেখানে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন রয়েছে।
এরআগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর ভোরে খাগড়াছড়িতে মো. মামুন (৩০) নামের এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বিক্ষোভ মিছিল বের হলে ঘটনার সূত্রপাত হয়। এরপর খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে ছড়িয়ে পড়ে সহিংসতা। এ ঘটনায় খাগড়াছড়িতে তিনজন নিহত হন। এরপর অশান্ত হয়ে ওঠে পাহাড়। যার জেরে পরবর্তীতে পার্বত্য চট্টগ্রামের দুই জেলায় (খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি) ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন।
খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল বাতেন মৃধা জানান, বেশ কিছুদিন ধরেই শিক্ষক সোহেল রানাকে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছিল পাহাড়ি ছাত্রছাত্রীরা। বেশ কয়েক বছর আগে সোহেল রানার বিরুদ্ধে এক পাহাড়ি ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে মামলা হয়েছিল। ওই ছাত্রী আদালতে এসে পাহাড়ি একটি সংগঠনের চাপে মামলা করেছে মর্মে সাক্ষ্য দিলে সোহেল রানা খালাস পান এবং চাকরিতে যোগদান করেন। সোহেল রানা চাকরিতে যোগদানের পর থেকে পাহাড়ি ছাত্ররা তার বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন হয়রানির নানা অভিযোগ এনে প্রত্যাহার দাবি করে আসছিল। গতকাল মঙ্গলবারও ত্রিপুরার এক ছাত্রীকে আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগে সোহেল রানাকে গণপিটুনি দেন পাহাড়ি শিক্ষার্থীরা। এতে সোহেল রানার মৃত্যু হয়।
খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সুজন চন্দ্র রায় বলেন, উত্তেজিত শিক্ষার্থীদের থামাতে গিয়ে আমি এবং জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ সংবাদকর্মীরা আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে নগরজুড়ে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
অপর একটি সূত্র জানায়, সহিংসতার পর অনেকটাই শান্ত হয়ে উঠে দীঘিনালার পরিস্থিতি। পুড়ে যাওয়া দোকানপাটের অবশিষ্টাংশ পরিষ্কার করে আবার নতুন করে তা তৈরি করতে ব্যস্ত সময় পার করছিলেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা। তাদের মধ্যে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীর চোখে-মুখে হতাশার ছাপ। সাজানো গোছানো স্বপ্ন চোখের সামনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। সহিংসতার জেরে মুহূর্তের মধ্যে নিঃস্ব হয়ে গেছেন তারা। এরই মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুলের এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ তুলে একই প্রতিষ্ঠানের ইন্সট্রাক্টর (বিল্ডিং মেইনটেন্যান্স) ও বিভাগীয় প্রধান শিক্ষক আবুল হাসনাত মুহাম্মদ সোহেল রানাকে (৪৮) পিটিয়ে হত্যা করে। শিক্ষক নিহতের জেরে পাহাড়ি ও বাঙালি দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। উত্তপ্ত হয়ে উঠে খাগড়াছড়ি শহরজুড়ে। বর্তমানে পাহাড়ে বসবাসরত সাধারণ মানুষ রয়েছেন আতঙ্কে।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স